বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরে দু দেশের মধ্যে কোনও চুক্তি হচ্ছে না, তবে কুড়িটির মতো সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি কিছু প্রকল্পর উদ্বোধন হতে পারে। যে সব বিষয়ে সমঝোতা হবে তার কোনও আর্থিক মূল্যের কথা না জানালেও মন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এখন ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এই সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক হবে, যার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রয়োজনের নিরিখে এবং সব শর্ত পূরণ হলে ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় পাঁচশ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বেইজিংয়ের দিক থেকে ঘোষণা আসতে পারে এবং এই ঋণ চীনা মুদ্রায় দেওয়ার ওপরই জোর দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর এটি দ্বিপাক্ষিক স্তরে তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এর আগে তিনি গত মাসে ভারত সফর করেছেন।
অর্থের জন্য চীন কেন গুরুত্বপূর্ণ
গত এক দশক ধরে ছোট বড় নানা প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার। চীনের অর্থায়নে চট্টগ্রাম টানেল নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছে চীনা কোম্পানি। প্রায় শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউট’ বা এইআই গত বছর যে ধারণা দিয়েছিল তাতে বাংলাদেশে মোট চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল সাত বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এছাড়া চীনের কয়েকটি কোম্পানি বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের নির্মাণ কার্যাদেশ পেয়ে কাজ সম্পন্ন করেছে কিংবা এখনও করছে।
বাংলাদেশের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও এখন সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রধান আব্দুল মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চীনের কাছ থেকে আর্থিক বা প্রকল্পগত সহায়তা চাওয়ার কারণ হল চীন কখনও ‘অন্যের ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না’।
“চীন উদীয়মান বিশ্ব সেরা অর্থনীতি। এশীয় প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আরও বন্ধুত্বের পক্ষে। যে কোনও চুক্তি বা সমঝোতায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। তাই চীনের সাথে বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ”, বলছিলেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত রাজনৈতিক যোগাযোগ,অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে চীনা সহায়তা চেয়ে থাকে।